কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা, কক্সবাজার শহর থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বাজার।

এখান থেকে ৩ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী বাজার, তারপর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উচিতারবিল এলাকা।

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা

এলাকাটি একটি হাতির অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যে একটি উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে JLB নামে একটি ইটের ভাটা তৈরি করা হয়েছে। ভাটিয়ার মালিক

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের টেকনাফ,

রামু, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও পেকুয়া উপজেলায় ১০৯টি ইটভাটা রয়েছে।

এর মধ্যে ৫টির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট ১০৪ টি জোয়ারের মধ্যে 54টির বৈধ নথি নেই। এই ৫৪টির মধ্যে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের জায়গায় ৩১টি ভাটার সৃষ্টি হয়েছে।

আট থেকে ১৫ বছর ধরে এসব ভাটায় ইট উৎপাদন চলছে।

কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার জানান,

সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের কাছে গড়ে ওঠা ৩১টি ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি দেওয়া হলেও উচ্ছেদ হচ্ছে না।

এটি বন উজাড়, হাতির চলাচলের করিডোরের বিলুপ্তি এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধ্বংস।

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা

সম্প্রতি আমি JLB নামক একটি ইটের ভাটায় গিয়ে দেখেছি যে ইট উৎপাদন পুরোদমে চলছে।

ভাটার পূর্ব দিকে পাহাড়। কয়েকজন শ্রমিক জানান, নিচু জমিতে দিনে কয়লা ব্যবহার করা হলেও রাতে বনের কাঠ পুড়িয়ে ইট উৎপাদন করা হয়।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিনেও কেউ পা রাখতে সাহস পায় না।

গত ৬ মার্চ জেএলবি নামের একটি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার ইট উৎপাদন করা হচ্ছে।

দুই দিন আগে ভাটার মালিক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে ইট উৎপাদন বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়।

এই ইটভাটাটির বিপরীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই।

শেখ মোঃ নাজমুল হুদা, উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার অফিস।

স্থানীয় বনবিদদের মতে, ২০০৯ সালের শেষের দিকে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সংরক্ষিত বনের অভ্যন্তরে ভাটা প্রতিষ্ঠা করেন।

আবার ইট উৎপাদন করা হচ্ছে

ভাটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সে বনের পাহাড় ও গাছপালা ধ্বংস করে। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু ইট উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ৮ মার্চ ইটভাটায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভাটার কিছু অংশ খনন যন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু কিছুদিন পর পুরোদমে ইট উৎপাদন শুরু হয়।

এর প্রতিবাদে ও এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্প্রতি চকরিয়া-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। কিন্তু ভাটা থামেনি।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, গত ৮ মার্চ অবৈধ ভাটা বন্ধ হয়ে যায়।

এখন আবার ইট উৎপাদন হচ্ছে। দুই দিন আগে ভাটার মালিক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে ইট উৎপাদন বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ইটভাটাটির বিপরীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই।

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

অবৈধ ভাটা বন্ধ হয়ে যায়

এর আগে অবশ্য তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, জোয়ারের বিপরীতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।

কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের সুরাজপুর-মানিকপুর বনাঞ্চলে পাঁচটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনটিতে ইটভাটা চলছে, দুটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

ভাটার সময় উৎপাদিত ইট পরিবহনের জন্য পাহাড়জুড়ে ১৫ থেকে ২২ ফুট চওড়া, আধা কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

সড়ক নির্মাণের সময় বেশ কয়েকটি পাহাড় ও বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে ফেলা হয়।

এ রুটে এখন ট্রাকে ইট সরবরাহ করা হচ্ছে।

একটি ইটের ভাটার মালিক স্থানীয় শাহ আলম। তিন বছর ধরে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে শাহ আলমের ইট ভাটা।

“আমি পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার চেষ্টা করেছি,” তিনি বলেছিলেন।

এখন ট্রাকে ইট সরবরাহ করা হচ্ছে

কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর বনের ভেতরে বলে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ‘

এ প্রসঙ্গে মানিকপুর বিট কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বনাঞ্চলে ইটভাটা রয়েছে।

আর রাস্তা ছিল কয়েক বছর আগে। তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না।

এ বছর অবৈধ ইটভাটায় ৩৫টি মামলা হয়েছে। গত বছর ৫৫টি মামলা ছিল।

২০০১ সালে জিগজ্যাগ চিমনি সহ ব্রিকফিল্ড স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের সীমানার দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

কিন্তু টেকনাফের হোয়াইকেং, ঈদগাঁও, রামুর কাউয়ারখোপ ও খুনিয়াপালং এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশ ও বনাঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নিচু জমি।

ভাটার সময় বেশির ভাগ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *