বৃষ্টিতে বেড়েছে হাওরের পানি ভেঙেছে আরেকটি বাঁধ, আবার পাহাড়ি ঢলের আতঙ্কে গত মঙ্গলবার রাত
থেকে বৃষ্টিতে হাওরের পানি বেড়েছে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ড ইউনিয়নের
রাঙ্গামাটিয়া হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে ভেঙ্গে ভিতরের অংশে পানি প্রবেশ করেছে। এতে তলিয়ে গেছে
১০০ হেক্টর জমির অর্ধ-পাকা বোরো ধান।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিয়া
হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো প্রকল্প নেই।ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ড ইউনিয়ন ও
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সাত গ্রামের কৃষকরা হাওরে ধান রোপন করেছেন।
ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী তালুকদার জানান, রাঙ্গামাটিয়া হাওর
তলিয়ে যাওয়ায় তার ইউনিয়নের সব হাওর তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, রাঙামাটিয়া হাওরে ১০০ হেক্টর
জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newsallx.com
বৃষ্টিতে বেড়েছে হাওরের পানি ভেঙেছে আরেকটি বাঁধ
তবে তাহিরপুর উপজেলার বৃহত্তর শনি ও মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ এখনো অক্ষত রয়েছে।এদিকে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা মাঠ থেকে অর্ধ-পাকা ধান তুলতে ব্যস্ত। কিন্তু গতকালের বৃষ্টির কারণে কাটা ধান শুকাতে পারেনি। বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে নতুন করে সংকট দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।তবে নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও মেঘলা আকাশ দেখে কৃষকরা জমির আধা পাকা ধান কাটছেন।সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমা এলাকার কৃষক রিপচান হাবিব বলেন, হাওর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন ধান শুকাতে পারছি না। একদিকে মেঘলা আকাশ, অন্যদিকে ধান শুকানোর জায়গার অভাবে ভোগান্তি।সুনামগঞ্জের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ৭২ হাজার হেক্টর জমি থেকে ধান কাটা হয়েছে গড়ে ৪৯ শতাংশ। তবে কৃষক ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বলছেন, ধান কাটার পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি হবে না।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় ছোট-বড় ১৬টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ৫ হাজার ৮৩৫ হেক্টর বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, এ বছর হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গত সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এখনো এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা বাকি। তবে চলতি মাসের মধ্যে হাওরের ৯০ শতাংশ জমির ফসল কেটে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান, জেলায় ১,৬৪,৬২৬ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে চাষ হয় ৪০,৯৬০ হেক্টর জমিতে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট ৩০ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমি থেকে ধান কাটা হয়েছে। হাওরের ৭৫% ও সমতল জমিতে ৪% ধান কাটা হয়েছে।
নেত্রকোনা পাউবো ও কৃষি বিভাগ
সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় হাওরের কীর্তনখালা বাঁধ ও পেয়ার বাঁধ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এখন সব বাঁধের গোড়ায় পানি। এ অবস্থায় বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন এলাকার কৃষকরা।নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম মোবারক আলী জানান, মঙ্গলবার রাতে তিন সেন্টিমিটার বাড়লেও গতকাল দিনের বেলায় পানির স্তর স্থিতিশীল ছিল। তবে টানা তিন দিন ধরে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কয়েকটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাওরের ৬০৫ হেক্টর এবং কিশোরগঞ্জ জেলার নেত্রকোনায় ১১৩ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।গত ২ এপ্রিল সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে হাওর ডুবে শুরু হয়। পরে ৫ এপ্রিল ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনায় থাল হাওরের দুবাইল বাঁধ ভেঙে ফসল নষ্ট হয়।