কেমন আছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিশুরা, গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া
ইউনিয়নের হোসেনপুর
গ্রাম। অরকা হোম নামের একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামের একটি তিনতলা ভবনে অবস্থিত। সংস্থাটি 2013 সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত পোশাক
শ্রমিকদের
45 জন শিশুর বাড়ি। এর মধ্যে 19 জন মেয়ে এবং 26 জন ছেলে।বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এতিমদের শিক্ষাসহ সব ধরনের দায়িত্ব
নিয়েছে
সংগঠনটি।
অলকা (পুরাতন রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন), রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন। পোশাক কারখানা মালিকদের
সংগঠন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
আরও খবর পেতে ভিজিট করুউঃnewsallx.com
কেমন আছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিশুরা
ফাতেমা আক্তার, অলি হোসেন, সোনালী আক্তার, জিয়াদ হোসেনসহ ওই শিশুরা রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরপরই এসব বাড়িতে আশ্রয় পায়।
তারা
এখানে ভাল. শিক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষা সবই তাদের দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও সেই কষ্টের স্মৃতি মন থেকে মুছে যায়নি। ‘ট্র্যাজেডি
শিশু’
বড় হচ্ছে, কিন্তু তাদের অনেকের চোখেই মাঝে মাঝে ভেসে উঠছে মা বা বাবার নিথর দেহ।ওই ঘটনার পর থেকে নীরব সাভারের অলি
হোসেন।
সে চোখ মুছতে মুছতে বলল, তার মা ভেতরে পিষ্ট হয়ে গেছে। বড়দের হাত ধরে মায়ের ছবি তুলে প্রতিদিন ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন
তিনি।
বারো দিন পর অধরচন্দ্র মডেল হাইস্কুলের মাটিতে পাওয়া মায়ের বিকৃত লাশ এখনো চোখে ভাসছে। তার হাতে থাকা ব্যাগে তার পরিচয়পত্র ও
জামাকাপড় দেখে তার মাকে শনাক্ত করা হয়। এ সময় অলি হোসেনের পাশে দাঁড়ান ‘অর্ক’। প্রথমে চিটাগাং ওরকা, পাঁচ বছর আগে তাকে
পাঠানো
হয় গাইবান্ধায়। এখন সে দশম শ্রেণীর ছাত্র। সে বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চায় এবং এই ধরনের জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে
চায়।সাদুল্যাপুরের আল আমিন, সাভারের ফাতেমা আক্তার মিম, তার ছোট বোন সোনালী আক্তার বীথি সবার একই গল্প। কারো বাবা-মা নেই। কারো
কাছ থেকে নয়। মীম জানান, ভবন ধসে তার মা বুকে আঘাত পান। এখন তার ক্যান্সার হয়েছে। বাবা খোঁড়া। তাদের দেখার সামর্থ্য তার নেই।
প্রচণ্ড আঘাতে জিয়ার মা স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। ওই দিনই আল-আমিনের মা মারা যান।
কিন্তু অলির মতো সবাই প্রতিশ্রুতি দেন
মানুষ এমন হবে যারা পড়তে শেখে। দশম শ্রেণীর জিয়াদ বলেন, মুখে যাই বলি। কষ্ট আছে, অনেক কষ্ট আছে, সংসার ধ্বংস হলে মানুষের কি
আছে!কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, হোসেনপুর গ্রামের তিনতলা ওরকা হোমস ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছেলেরা থাকে। আর মেয়েরা থাকে তৃতীয়
তলায়। গাইবান্ধায় 2014 সালের 26 ডিসেম্বর প্রায় 90 লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়িগুলো স্থাপন করা হয়। পরে একটি বর্ধিত তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়।
প্রচলিত আশ্রয়ের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এখানকার শিশু-কিশোরদের পোশাক-আশাক ও চলাফেরায় তাদের রুচির স্পষ্ট ছাপ রয়েছে।
এখানকার শিশু-কিশোররা সবাই পাশের মুসলিম একাডেমিতে পড়ছে। তাদের দেখভালের জন্য একজন কেয়ারটেকার আছে। তাদের জন্য হোম
টিউটর রাখা হয়েছে। শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকও আছেন। ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থাও আছে। আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবসময় স্নেহের সাথে মুখে হাসি ধরে
রাখার চেষ্টা করেন।গাইবান্ধার ওরকা হোমসের পরিচালক মো. জাহিদুল হক বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এসব বাড়ির শিশুদের
জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে থাকে। এ ছাড়া মূলত দেশ-বিদেশের সরকারি সদস্যদের আর্থিক সহায়তার ভিত্তিতে আশ্রয়ের
খরচ মেটানো হয়।
কেমন আছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিশুরা
তিনি বলেন, এই শিশু-কিশোররা বড় হলে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা বা চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।কর্তৃপক্ষ জানায়, রানা প্লাজা ধসের
এই দিনে বিশেষ দোয়া ও স্মরণের মধ্য দিয়ে শিশুরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অনেক আত্মীয়-স্বজন তাদের দেখতে আসেন।